সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

আলোর মুখ দেখেনি কুষ্টিয়ার তিন অর্থনৈতিক অঞ্চল 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

আলোর মুখ দেখেনি কুষ্টিয়ার তিন অর্থনৈতিক অঞ্চল 

বার বার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন জটিলতায় কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন কুষ্টিয়ায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পনগরী ও স্থলবন্দর গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং অর্থনৈতিক শক্তি চাঙ্গা হবে। 

তবে জেলার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল জমি হস্তান্তর ও কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের কাজ এর আগে সম্পন্ন হলেও দৌলতপুর সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপন দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। 

এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখলে নতুন নতুন কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা। দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে লালনশাহ সেতু হয়ে জাতীয় মহাসড়ক মাত্র ২০ কিলোমিটার, ওপারে পশ্চিমবঙ্গের শিকারপুরে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক। 

ব্রিটিশ আমলে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতু ছিল। সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার করা হতো প্রাগপুরকে। কালক্রমে ওই সেতু বিলীন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে ফের পথটি চালু করা দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। 

তথ্য মতে, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় প্রস্তাবিত প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ফের ব্যাপক সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। প্রাগপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-কলকাতার দূরত্ব কমিয়ে দিতে পারে ১০০ কিলোমিটার। যা দুই দেশের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সাশ্রয় করতে পারবে। 

এ ছাড়া প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত করতে অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রেও বড় কোনো অর্থের দরকার হবে না দুই দেশের সরকারের। মহাসড়ক কাছাকাছি হওয়ায় অনায়াসে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা মতো অনুকুল পরিবেশ রয়েছে। শুধু মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর ছোট্ট একটি  ব্রিজ নির্মাণ করা দরকার। 

তাছাড়া বৈধ পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলে চোরাচালানসহ অবৈধ পথে পণ্য আনা-নেয়াও বন্ধ হবে। ফলে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পাবে সরকার। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মস্থান। তাই প্রস্তাবিত এই স্থলবন্দরটির দ্রুত বাস্তবায়ন চান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। 

তথ্যসূত্র বলছে, অর্থনেতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় ঐহিহাসিক গুরুত্ব দিয়ে ২০১১ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কুষ্টিয়ায় সফরে এসে প্রাগপুর সীমান্তে স্থলবান্দর স্থাপনের ঘোষণা দেন। 

এরপর প্রাগপুর সীমান্তে সরেজমিন এসে স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছেন নৌপরিহবন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলও। ভূমি জরিপসহ অন্য কাজও হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

এদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কার্যক্রম। ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্যদিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

এ জন্য ভেড়ামারা উপজেলার চরমোকারিমপুর, আরাজিসারা এবং চররুপপুরে মৌজায় প্রায় ৫০৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে। রেলওয়ে এবং সরকারের অব্যবহূত জমি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এই এলাকাটিকেই বেছে নেয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য। ২০১৭ সালে ১০ জুন জেলা প্রশাসন ৩১২ একর খাস জমির দলিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর থেকে এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

কুমারখালীতে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়তে তারই ধারাবাহিকতায় নতুন করে আধুনিক ও পরিকল্পিত একটি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশের ডোবা ভরাট করে ১০০.৫৬ একর জায়গায় শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও জটিলতায় তা ভেস্তে গেছে।

টিএইচ